29.7 C
Bangladesh
Tuesday, November 12, 2024
spot_imgspot_img
Homeশোক সংবাদবাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আর নেই।

বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আর নেই।

সাইদা খানম

বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী একুশে পদকপ্রাপ্ত সাইদা খানম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটায় ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আলোকচিত্রী মুনিরা মোরশেদ। সাইদা খানমের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

মুনিরা মোরশেদ বলেন, বনানীর বাড়িতে সাইদা খানম থাকতেন। কিছুদিন আগে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কিডনির জটিলতাও ছিল। আজ মঙ্গলবার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

সাইদা খানম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও লাইব্রেরি সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। বাবা আবদুস সামাদ খান, মা নাছিমা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় হলেও জন্ম পাবনায়, ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। স্থিরচিত্রী হিসেবে শুরু করেন কাজ। সেই সময় পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই ছিলেন একমাত্র ও প্রথম নারী আলোকচিত্রী।

বেগম পত্রিকার মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর ছবি ছাপা হয় অবজারভার, মর্নিং নিউজ, ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন তিনি। অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবিও তোলেন সাইদা খানম। সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেন তিনি।

১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। এর পরই বাংলাদেশে আলোচনায় আসেন। এরপর ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। জাপানে ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পান তিনি।

১৯৬২ সালে চিত্রালী পত্রিকার হয়ে একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সমাদৃত হন সাইদা খানম। পরে সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম ঢাকার আজিমপুর এলাকায় অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের ছবি তোলেন। ১৬ ডিসেম্বরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (পরে শেরাটন ও রূপসী বাংলা) সামনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। খবর পেয়ে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানকার ছবি তুলতে যান তিনি। প্রচণ্ড গোলাগুলির কারণে সেদিন অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি। সেদিন একজন নারী আলোকচিত্রী হিসেবে তাঁর সাহস দেখে সবাই বিস্মিত হন।

ক্যামেরার ক্লিকের পাশাপাশি লেখালেখি করতেন সব সময়। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ধূলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’, ‘আলোকচিত্রী সাইদা খানম-এর উপন্যাসত্রয়ী’।

সূত্রঃপ্রথম আলো

Most Popular

Recent Comments