23 C
Bangladesh
Friday, March 29, 2024
spot_imgspot_img
Homeঅভিযোগনওগাঁর ধামুইরহাটে রাতের বেলা কলেজ কতৃপক্ষকে না জানিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন...

নওগাঁর ধামুইরহাটে রাতের বেলা কলেজ কতৃপক্ষকে না জানিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন এক শিক্ষক

মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ

নওগাঁর ধামইরহাটে অত্যন্ত গোপনে রাতের বেলায় এক শিক্ষক কাটলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ। গাছগুলি রাতেই ছ মিলে নেয়া হয়। সেখান থেকে কিছু গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।জানা গেছে,ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় ক্যাম্পাসের পতিত জমিতে প্রচুর পরিমাণে বনজ জাতীয় বৃক্ষরোপন করা হয়। বর্তমান গাছগুলোর বয়স প্রকারভেদে ১৫-২০ বছর হয়েছে। অনেক গাছ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। বৃক্ষরোপনের জন্য ওই কলেজের অধ্যক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন।

বর্তমানে কলেজের চারিদিকে সুবিস্তৃত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত প্রতি রাতে কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মো.নাসির উদ্দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটিকে না জানিয়ে প্রায় ৪০টির মতো আকাশমনি ও ঘোড়ানিম জাতীয় গাছ কেটে নিয়ে যায়। গাছ কাটার পর গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। পরবর্তীতে কলেজের প্রতিবেশিরা গাছ কাটার বিষয়টি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ড.ইঞ্জিনিয়ার ফিজার আহমেদকে জানান। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। শনিবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক গাছের মাঝে মাঝে দামী গাছগুলো কেটে গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।

গাছ কাটার পর সেগুলো ভ্যানযোগে স্থানীয় দুটি ছ মিলে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। স্থানীয় মৌসুমী ছ মিলের পরিচালক মো.হারুনুর রশীদ বিদ্যুৎ জানান, তার মিলে ভ্যানযোগে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বিক্রির উদ্দেশ্যে ২১টি গাছের গুল (গাছের দেহ) নিয়ে আসে। তার মধ্যে ১৪টি আকাশমনি গাছের গুল ইতোমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন। বাকী ৬টি ঘোড়ানিম গাছের গুল মিলে রয়েছে। ওই কলেজের শিক্ষক নাসির উদ্দিন কৌশলে কলেজের নৈশ্যপ্রহরী মো.ওহেদুল ইসলামের কাছ থেকে কলেজের প্রধান ফটকের চাবি নিজের কাছে রাখেন। আর রাতে কলেজের গাছ কেটে ভ্যানযোগে স্থানীয় ছমিলে নিয়ে যান। কলেজের নৈশ্যপ্রহরী মো.ওহেদুল ইসলাম জানান,কলেজের পূর্বের অধ্যক্ষ এর মৌখিক আদেশ মোতাবেক ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নাসির উদ্দিনকে কলেজের প্রধান ফটকের একটি চাবি দেয়া হয়। সেই চাবি গত শনিবার ৯/১০/২১ ইং তারিখে আমাকে ফেরত দিয়েছে।

এব্যাপারে অভিযুক্ত প্রভাষক মো.নাসির উদ্দিন বলেন,কলেজ পরিচালনা পর্ষদের মৌখিক আদেশ মোতাবেক কলেজের নতুন সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন এবং পতিত জমিতে রুপালী আম গাছ লাগালোর জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আম গাছ লাগানোর জন্য গাছের সারি সোজা করতে কয়েকটি গাছ কেটেছি। গাছ ও খড়ি বিক্রির ৩ হাজার ৯শত টাকা আমার কাছে রক্ষিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক গাছ কাটার বিষয় জানেন। তারাও এর সাথে জড়িত।

ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো.আশরাফুল ইসলাম বলেন,কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে গেলে আমি সবেমাত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্বের অধ্যক্ষের নিকট থেকে কলেজের প্রধান ফটকের চাবি নিয়েছিল শিক্ষক নাসির উদ্দিন। গাছ কর্তনের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গাছ কাটার বিষয়ে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কলেজের সভাপতির সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ড.ইঞ্জিনিয়ার ফিজার আহমেদ বলেন.গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের অতি পুরনো গাছগুলি কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু কোন প্রকার আলোচনা না করে নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাতের বেলায় প্রায় ৪০টি গাছ কেটেছেন ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মো.নাসির উদ্দিন। এতে কলেজের প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ওই শিক্ষক নিঃসন্দেহে নিগৃহীত কাজ করেছেন। দ্রুত গভর্নিং বডির সভা ডেকে বিষয়টি আলোচনা পূর্বক দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments