24 C
Bangladesh
Thursday, March 28, 2024
spot_imgspot_img
Homeইসলামী কলামপ্রিয় নবীজিকে কেন ভালোবাসবেন? -লেখক সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলাম রুবেল

প্রিয় নবীজিকে কেন ভালোবাসবেন? -লেখক সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলাম রুবেল

মোঃ ফেরদৌস মোল্লা পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
সন্তান-সন্তুতি, মা-বাবা তথা নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে যাকে; তিনি হলেন হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এতবেশি ভালোবাসতে হবে? এ সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাই বা কী?

হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই এ ‘কেন ভালোবাসতে হবে’-এর উত্তর দিয়েছেন সুস্পষ্টভাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এতটা ভালোবাসার নামই ‘ঈমান’। তাতে মুমিন মুসলমানের ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই আল্লাহর শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না; যতক্ষণ না আমি তার নিজের জীবনের চেয়ে, তার বাবা-মা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র হই।’ (বুখারি)

‘হ্যাঁ’ পরিপূর্ণ মুমিন হতে দুনিয়ার জীবনে সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় নবিকে ভালোবাসতে হবে। তবে এমন ভালোবাসা নয় যে, মুখে মুখে এ কথা বলা- হে রাসুল! আমি তোমাকে ভালোবাসি; হে রাসুল! আমি আপনাকে ভালোবাসি।

‘না’, এমন ভালোবাসা নয়। এ ভালোবাসা হবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শকে ভালোবাসা। যার প্রথমেই রয়েছে- তাওহিদ ও রেসালাত তথা ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো উপাস্য নেই আর হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর রাসুল’-এ কথার প্রতি মনে প্রাণে বিশ্বাস করা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ ও অনুকরণ করা। আর এর মাধ্যমেই মুমিন বান্দার জন্য দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করা। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এ ভালোবাসার কথাই তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আমার (রেখে যাওয়া আদর্শ) অনুসরণ করলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন আর (যারফলে আল্লাহ) তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

এ আয়াতে দুইটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো- আল্লাহর ভালোবাসা লাভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসুলকে মুখে মুখে ভালোবাসি বলে তার সুন্নাতের অনুসরণ-অনুসরণ না করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। পাওয়া যাবে না আল্লাহর ভালোবাসা।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী ভালোবাসার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করলেই আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হবে। আর তাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যার ফলে বান্দা নিষ্পাপ হয়ে পরকালের সফলতা লাভ করবে।

সুতরাং মুমিন মুসলমান, ছোট-কিংবা বড়, শুভ্র কিংবা প্রেীঢ়, কিশোর কিংবা যুবক প্রতিটি বয়সের মানুষের জন্য বিশ্বনবিকে ভালোবাসা এবং সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করাই হলো মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত। যে বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর জিকিরকারী বান্দাদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন-
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম (অনুসরণীয়) আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

কেন নবিজীকে ভালোবাসবো?
কারণ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনভর এ আদর্শ বাস্তবায়নে ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এমন কষ্ট খুব কম আছে, যা তিনি ভোগ করেননি।

এত কষ্টের পরও তিনি নিজ উম্মতকে ভুলে যাননি। কোনো উম্মতের উপর নিজ জাতিকেও স্থান দেননি। কেননা তার কণ্ঠের সূরধ্বনিই ছিল- উম্মতি, উম্মতি অর্থাৎ হে আমার উম্মাত! হে আমার উম্মাত। তাওহিদ-রেসালাতে জীবন গড়ো। আমারই আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ করো। এতেই রয়েছে নাজাত। আর এতেই রয়েছে মুক্তি।

কেন নবিজীকে ভালোবাসবেন?
এর উত্তর রয়েছে, তায়েফে ইসলাম প্রচারের ঘটনায়। তাওহিদ ও রেসালাতের দাওয়াত দিতে গিয়ে রক্তাত হয়েছিলেন তায়েফের জমিনে। ফেরেশতারা পাহাড় উল্টিয়ে দেয়ার অনুমতি চেয়েছিল। তিনি তোতে সম্মতি হননি বরং তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন। তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই- মানুষকে পরকালের কঠিন পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করা।

সম্প্রতি সময়ে বিশ্বনবির জন্ম নেয়ার মাসে তাকে অপমান করেছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট এ অপমানের আনলে ঘি ঢেলে দিয়েছে। বিশ্বনবিকে অপমান করতে সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে। যা কোনো বিবেকবান মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। হোক মুসলিম কিংবা অমুসলিম। তাইতো বিশ্বব্যাপী মুসলিম অমুসলিম ফ্রান্সের প্রেসিডিন্ট ম্যাক্রোর প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। খোদ অমুসলিমদের চরম ধিক্কার ও তোপের মুখে পড়েছে ম্যাক্রো।

প্রিয় নবির জন্ম মাসে মুমিন মুসলমানকে এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে যে, তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দুনিয়ার দিকে দিকে ইসলামের শান্তি ও সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে। পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার দাবিতে এগিয়ে আসতে হবে। মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে বিশ্বনবি ভালোবাসা অটুট রাখতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments