রাবি প্রতিনিধ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র, অনাবাসিক হল কার্ড ছবি ও ব্যক্তিগত ছবি চুরি করে ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও হোয়াটসঅ্যাপ) ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচার নামে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষার্থী। একটি প্রতারক চক্র তার ব্যক্তিগত এসব তথ্য ব্যবহার করে বেশ কয়েকজনের কাছে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান। তিনি ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাসা রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, আজ আমি এক ভয়াবহ এবং চরম নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতাকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে এসেছি। গত কয়েক মাস ধরে আমি এবং আমার পরিবার এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমার আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র, অনাবাসিক হল কার্ডের পেছনের ছবি এবং ব্যক্তিগত ৪-৫টি ছবি চুরি করে ব্যবহার করছে। তারা প্রবাসী এবং দেশের ভেতরে থাকা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এহেন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে৷
এই প্রতারণার মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে-যার ফলে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত আমি। কারণ তারা আমার পরিচয় ব্যবহার করছে। ভুক্তভোগীরা যখন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তখন তারা সরাসরি আমার ওপর ক্ষোভপ্রকাশ করছেন, আমাকে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক মনে করছেন। ফলে আমি প্রতিনিয়ত হুমকি, গালাগালি, প্রাণনাশের ভয় এবং সামাজিক অপমানের শিকার হচ্ছি।
৮ই অক্টোবর ২০২৪ সালে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত অবস্থায় জানতে পারি, আমার পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারকচক্র এক প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রবাসী ভাই আমার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং প্রথমবারের মতো আমি পুরো ঘটনাটি জানতে পারি। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বিভাগের একজন সম্মানিত শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করি। তাঁর পরামর্শে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে যোগাযোগ করি এবং ৯ই অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি (জিডি নম্বর: ৩৯৯)। পরবর্তীতে এক সিনিয়র ভাইয়ের পরামর্শে রাজশাহী র্যাব-৫ অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। সবার সচেতনতার জন্য আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি সচেতনতামূলক পােস্ট শেয়ার করি৷
এই প্রতারণার মাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি এখন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং নিচ্ছে – যা শুধু রাজশাহী নয়, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এমনকি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভাইদেরও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।প্রতারিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- ফতে মাহমুদ রাফি (প্রবাসী), মাহমুদুল খান (ময়মনসিংহ),রাকিব হাসান (সিরাজগঞ্জ), সুমন মিয়া (শেরপুর), মাসুদ (রাজশাহী), সাজিদ (রাজশাহী), আরও অনেক অজানা ভুক্তভোগী।
নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই হুমকির কারণে আমি এবং আমার পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারছি না, এবং রাতের বেলায় বাড়ির সদস্যরাও আতঙ্কে থাকছেন। পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবন ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতারকচক্রের কারণে আমার শিক্ষা জীবন, সামাজিক সম্মান ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনের আশ্রয় নিয়েও এখন পর্যন্ত প্রকৃত প্রতারকচক্রকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ফলে দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক ও ঝুঁকি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতির কারণে আমি বাধ্য হয়েছি সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী কোর্টের শরণাপন্ন হতে এবং মামলা রুজি করার সিদ্ধান্ত নিতে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, কিপ্টো কারেন্সি নিয়ে বেশ কয়েকটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এটা তো অনেকদিন আগের কাহিনী ছিলো। তবে এখনও যেহেতু সমাধান হয়নি, আমি এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলে দেখি কী কিছু করা যায় কিনা।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ তো নেওয়ার কথা। সাইবারে বিষয়টা পাঠানোর কথা। তবে বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
হাফিজুর রহমান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়