36 C
Bangladesh
Friday, April 26, 2024
spot_imgspot_img
Homeআসক্তকুয়াকাটার যুবসমাজ মাদকের মতো ফ্রী ফায়ার ও পাবজি গেমের নেশায় আসক্ত হচ্ছে।

কুয়াকাটার যুবসমাজ মাদকের মতো ফ্রী ফায়ার ও পাবজি গেমের নেশায় আসক্ত হচ্ছে।

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কুয়াকাটা- কলাপাড়া, প্রতিনিধি:-

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদি বন্ধের কবলে পড়েছে এবং দীর্ঘদিন যাবত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। এ অবস্থায় কলাপাড়া উপজেলা পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সহ গ্রাম গঞ্জের শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়ে আধুনিক স্মার্ট মোবাইলে এখন কার আলোচিত অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজিতে ঝুঁকে পড়ছে হাজারো যুবক।

প্রাথমিক থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ খেলায় আসক্ত হচ্ছেন। অভিভাবকরা বাধা দিলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

শুধু শহর নয়, কুয়াকাটায় পাড়া-মহল্লায় এ দৃশ্য নিত্যদিনের নতুন আড্ডা, দিন যতই ঘনিয়ে আসছে গেমের প্রতি তত আসক্ত হচ্ছে যুব সমাজ।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কুয়াকাটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে এই গেম খেলার গ্রুপ তৈরি করি, সারাদিন এই গেম খেলে সময় পার করছি, গেম খেলোয়ারদের প্রশ্ন করলে জবাবে বলেন, এই গেম খেলতে ডাটার প্রয়োজন হয়, এবং গেমের পিছনে টাকা খরচ করতে হয়, যেমন ডায়মন্ড সহ নানা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়, এতে খরচ হয় দেশের অর্থ এবং এই গেম খেলার জন্য দামি ফোনের প্রয়োজন, শিক্ষার্থী বলেন, এই গেম খেলার জন্য সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকার ফোন প্রয়োজন হয়ে থাকে যার ফোন যত দামি তার ফোনে তত ভালো গেম খেলতে পারে তারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে গ্যাং গ্রুপ। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ও খেলাধুলার মাঠ ছেড়ে গেমের নেশায় মেতে উঠছে একই সাথে অসামাজিক ভিডিও ভাসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যে ভিডিওর মধ্যে নেই সামাজিকতা এবং শিক্ষনীয় তা টিকটক নামের অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে যুব সমাজের মাঝে । এই কাজে ছাত্রীরাও পিছিয়ে নেই। সারাদিন এমনকি রাত জেগে ইন্টারনেটে খেলছে ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো নেশা ধরা গেম।

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে স্কুল, কলেজপড়ুয়ারা এসব গেমে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছেন, যা মাদকের চেয়েও ভয়ংকর। বিকালের সময় কুয়াকাটায় গ্রাম মহল্লায় খোলা মাঠ আনাচে-কানাচে দেখা গেছে কিশোররা ইন্টারনেটে ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে পড়ে আছেন। যাদের বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।

উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা ও পুরো যুব সমাজ দিন দিন ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নামক গেমের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা নিয়মিত পড়ালেখাসহ খেলার মাঠে ক্রীড়া চর্চার মধ্যে, সেখানে তারা ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মোবাইলে গেম খেলাকে নেশায় পরিণত করছেন।

আল্প বয়সের যুবকরা প্রতিনিয়ত অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে এসব গেমে আসক্ত হচ্ছেন। এসব গেম থেকে শিক্ষার্থী বা তরুণ প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা দেখছেন সচেতন মহল। একজন অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান ডায়মন্ড কেনার টাকা যোগান দিতে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপকর্মে।

মাদক বিক্রয় ও কিছু টাকার বিনিময়ে মাদক সেবীদের কাছে মাদক পৌঁছে দেওয়া তার মধ্যে অন্যতম। কোমলমতি শিশুদের ১০/২০ টাকা জমিয়ে যেখানে ক্রিকেট বল ফুটবল কেনার কথা, সেখানে তারা টাকা জমিয়ে রাখছে ইউসি/ ডায়মন্ড কেনার জন্য। ফায়ার গেমসে অনুরাগীরা জানান, ‘প্রথমে তাদের কাছে ফ্রি ফায়ার গেমস ভালো লাগত না। কিছুদিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন তারা আসক্ত হয়ে গেছেন। এখন গেমস না খেলে তাদের অস্বস্তিকর মনে হয় বলে জানা যায়।

গেম খেলায় ফোনে মেগাবাইট কিনতে খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই গেম যখন বিনোদন নেওয়ার জন্য খেলতাম তখন মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মেগাবাইট খরচ হতো। মেগাবাইট ছাড়া অন্য কোনো খরচ ছিল না। ধীরে ধীরে যখন এটা ভালো লাগে তখন প্রতিটা ইভেন্টে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ না করলে যেন হয় না। গেমটিতে পুরোপুরিভাবে মনোযোগ দিয়ে যখন খেলি তখন দেখি গেমের ভেতরে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো না কিনলে নয়। যেমন অলকের দাম ৪০০ টাকা, একটা জার্সি ৩০০ টাকা, নতুন ইভেন্টে আসলেই ২০০০ টাকার নিচে খরচ না করলে হয় না।

গেমে আসক্ত ছেলের অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে ভালো স্টুডেন্ট ছিল, এবং লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ স্কুল বন্ধ থাকায় সে বন্ধুদের সাথে মিলে গেমের প্রতি আসক্ত হয়েছে পরে, আমাকে চাপ প্রয়োগ করে ২৫০০০ টাকার স্মার্টফোন কিনে দিতে বাধ্য হতে হয়েছে, তিনি আরো বলেন, এই গেম খেলার অনুপ্রেরণা পায় বড় বড় ইউটিউব গেমিং চ্যানেল থেকে, আমি মনে করি যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,ও আমার কুয়াকাটার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতো, তাহলে আমার ছেলে এই গেমের প্রতি আসক্ত হতে পারতো না কারণ, লেখাপড়া শেষে যতটুকু সময় পেত তখন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর ছিল আমার ছেলে।

একাধিক অভিভাবক জানান, ‘অলস মস্তিষ্কে শয়তান বাসা বেঁধেছে’ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এভাবে স্কুল, কলেজ বন্ধ না রেখে সামাজিক দূরত্ব মেনে সপ্তাহে গ্রুপ আকারে তিন দিন ক্লাস নেওয়া হলে এভাবে খেলার সময় পেত না অনেকেই। সেজন্য অভিভাবকরা ক্লাসভিত্তিক গ্রুপ করে সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। স্কুল চালু করা না হলে শিক্ষার্থীরা গেম খেলার চেয়েও সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়বে বলে শঙ্কা করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, আমাদের অবসর সময়টি বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পার করতাম, কিন্তু এখনকার যুগে তরুণ প্রজন্মের সন্তানদের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার গ্রামগঞ্জে মোবাইলেগ্রুপ গেম এখন মহামারি আকার ধারণ করছে। ইয়ং জেনারেশন এখন ফ্রি ফায়ারের দিকে আসক্ত। যেটা কিনা একটা অনলাইন গেম, সেখানে গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার আসর তৈরি হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ পেলেই যথারীতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষক-শিক্ষিকা, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান ।

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
কুয়াকাটা প্রতিনিধি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments