33 C
Bangladesh
Tuesday, May 14, 2024
spot_imgspot_img
Homeআইন ও আদালতনওগাঁয় মধ্যযুগীয় কায়দায় টর্চারসেল বানিয়ে ব্যবসায়ীকে নির্যাতন,আটক-২

নওগাঁয় মধ্যযুগীয় কায়দায় টর্চারসেল বানিয়ে ব্যবসায়ীকে নির্যাতন,আটক-২

মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে মিঠুন চৌধুরী (২৭) নামে এক নার্সারী ব্যবসায়ীকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে টর্চারসেলে তিন দিন আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও তার স্ত্রী শ্যামলী রাণীর (২৫) চুল কর্তনের ঘটনার ৮ দিন পর অবশেষে থানায় মামলা এন্ট্রি করা হয়েছে।
উক্ত মামলায় পুলিশ অভিযুক্ত রুহুল আমিনের দুই স্ত্রী রুবাইয়া আকতার বৃষ্টি (২২) ও মুক্তা পারভীনকে (২১) গ্রেফতার করেছে।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, রবিবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় নির্যাতনের শিকার শ্যামলী রাণী বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
রাতেই থানা পুলিশ রুহুলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার দুই স্ত্রীকে আটক করে। কিন্তু মূল আসামি রুহুল পালিয়ে যায়। পুলিশ তার ব্যবহৃত কার (ঢাকা-৭৫৫/৯) জব্দ করেছে ও ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষর নেয়া ফাঁকা ষ্ট্যাম্প উদ্ধার করেছে।

মামলার অন্য আসামি হলো, রুহুলের সহযোগী পত্নীতলা উপজেলার ছোট চাঁদপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম (৪০)। রুহুল মহাদেবপুর উপজেলার দক্ষিণ হোসেনপুর বোয়ালমারী মোড়ের চাতাল ব্যবসায়ী মৃত আবুল কালামের ছেলে।

শ্যামলী রাণী জানান, অভিযুক্ত রুহুল আমিন তাদের নার্সারী থেকে বিভিন্ন জাতের চারাগাছ কিনতেন। গত ১৫ আগস্ট সকালে রুহুল তার কাজ করার জন্য মিঠুনকে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক তার কার গাড়িতে উঠিয়ে মহাদেবপুরে নিয়ে আসে। সেখানে তার ব্রয়লারের সামনে অবস্থিত টর্চার সেলে মিঠুনকে আটকে রেখে মোবাইলে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। শ্যামলী রাণী তার শাশুড়ির গলার সোনার গহনা বন্ধক রেখে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান।
কিন্তু রুহুল ও তার লোকেরা আরও টাকা চায়। টাকা না পেয়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিঠুনের পায়ের রগ কেটে দেয়, প্লাস দিয়ে চিমটিয়ে হাতের আঙ্গুল জখম করে, হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। তাকে ঠিকমত খেতেও দেয়া হয়নি।
তৃতীয় দিন ১৭ আগস্ট শ্যামলী রানী পত্নীতলা থেকে মহাদেবপুর থানার সামনে এসে এসআই সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানিয়ে রুহুলের ব্রয়লারে যান। সেখানে রুহুল ও তার দুই স্ত্রী শ্যামলীকে বেদম প্রহার করে তার মাথার চুল কেটে দেয়। পরে এসআই সাইফুল সেখানে উপস্থিত হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় শ্যামলী ও তার স্বামীকে রুহুলের টর্চার সেল থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তিনি রুহুল বা তার দুই স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেননি। আহত মিঠুন ও শ্যামলীকে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

রবিবার (২২ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি লাইভ দেখে মহাদেবপুর থানা পুলিশ শ্যামলী রাণীকে ডেকে এনে মামলা এন্ট্রি করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযুক্ত রুহুলের ব্রয়লারে প্রায়ই মাদকের ও গ্রুপ সেক্সের আসর বসতো। রুহুল তার প্রাইভেটকার ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান পৌঁছে দিত। এসব কাজের বিরোধীতা করলে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হতো। রুহুল উপজেলা যুবদলের সক্রিয় সদস্য হলেও সম্প্রতি ভিন্ন দলের একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মাদকের আসরে জিম্মি করে অনেকের সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।

এদিকে মহাদেবপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রুহুলকে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পুলিশ এব্যাপারে কোনই পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশী অভিযানের কিছুক্ষণ আগেই রুহুল প্রাইভেটকার যোগে পালিয়ে যায়। পুলিশ কারটি জব্দ করলেও রুহুলকে আটক করতে সক্ষম হয়নি।

এ ব্যাপারে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশের কোন গাফিলতি নেই। রুহুলকে আটকের জোড় তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments