30 C
Bangladesh
Monday, April 29, 2024
spot_imgspot_img
Homeপ্রতিবেদনমাছের নামে নাম।

মাছের নামে নাম।

ছবিঃ সংগৃহীত

গ্রামের নাম শিমুলতলা বা শিমুলিয়া কিংবা কদমতলা। তালতলা বা খেজুরবাগানও হতে পারে। এই সব নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিমুল, কদম, তাল কিংবা খেজুরগাছের সংখ্যাধিক্য। কিন্তু পাবনা কিংবা মাগুরার নাম কীভাবে এল? সহজ উত্তর, মাছের নাম থেকে।

পাবনা জেলার নাম এসেছে পাবদা মাছ থেকে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধানে জানাচ্ছেন, পর্বত থেকে পব্বদ তার থেকে পাবদা। পব্বদ হলো প্রাকৃত রূপ। পব্বদ ও নাও মিলে হয় পব্বন্নাও। অর্থাৎ যে নাও বা নৌকায় করে জেলেরা পব্বদ বা পাবদা মাছ ধরত। ‘পব্বন্নাও’ অর্থাৎ পাবদা মাছভর্তি নাও যে ঘাটে ভিড়ত তার সংলগ্ন এলাকাটি ‘পব্বন্নাও’ বলে পরিচিতি পায়। চলনবিলের তীরে পবন্নাও নামের জায়গাই পরে অপভ্রংশে পাবনা হয়ে গেছে। পাবদা মাছ মধ্যযুগের বাংলায় ভীষণ জনপ্রিয় ছিল।

অসিত দাস জানাচ্ছেন, বাংলা শব্দ ‘নান’ অর্থ নিচু জলাজমি। পব্বদ ও নান একত্রে হয় পবন্নান। অর্থ, যে জলা জনপদে পাবদা
মাছ পাওয়া যায়। পব্বনান ধীরে ধীরে ‘পাবনা’ নাম ধারণ করার সম্ভাবনা প্রবল; যেভাবে পর্তুগিজ শব্দ আনানাস বাংলায় হয়েছে আনারস।

কুড়িগ্রাম জেলার দুটি উপজেলার নাম রৌমারী আর ভূরুঙ্গামারী। এ দুটি জনপদের নামের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে মাছ। শুধু তা–ই নয়, এই দুই এলাকায় প্রায় ৩০টি গ্রামের নাম আছে মাছের নামে। মোগল আমলের রৌমারী অপভ্রংশে হয়েছে রুহিতমারী, তারপর রুহিমারী, তারও পরে রৌমারী। রুহিত শব্দটির অর্থ রুই মাছ। স্থানীয়ভাবে রুই মাছকে রৌমাছ বলা হয়। রুই মাছের প্রাচুর্যের সঙ্গে রুহিতমারি বা রৌমারীর সম্পর্ক। ভূরুঙ্গামারী নামটিও মাছের সঙ্গে যুক্ত এবং সেটাও রুই মাছ। রুই মাছের পোনাকে কুড়িগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ভ্রুঙ্গা। সেখান থেকে ভ্রুঙ্গামারী তথা ভুরুঙ্গামারী নামটির উৎপত্তি। আর কাতলা মাছের পোনাকে বলা হয় ফেকা।

রুই মাছ তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বাভাবিক নদীতে থাকলেও প্রজননকালে প্রাকৃতিক জঙ্গলযুক্ত নদীতে চলে আসে। এটা তার ডিম পাড়া ও প্রজননের অন্যান্য প্রাকৃতিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত। ভূরুঙ্গামারীঅঞ্চলে দুধকুমার নদ আছে, যেটি প্রাকৃতিকভাবে জলজ জঙ্গলে পরিপূর্ণ (ছিল বলা উচিত)।

এই দুটি জনপদের সংযোগসূত্র নদী। ভূরুঙ্গামারীএলাকায় দুধকুমার নদ আর রৌমারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ। রুই মাছ ব্রহ্মপুত্রে
বিচরণ করলেও প্রজননকালে দুধকুমার নদে উঠে আসে। সেখানেই রুই মাছের বাচ্চা ফোটে অর্থাৎ ভ্রুঙ্গারা থাকে। তারপর তারা রুহিৎমৎস্য বা রুই মাছ হয়ে ফিরে যায় রুহিতপুর নামের বর্তমান রৌমারীতে! প্রবীণ মানুষদের কাছে রুহিতপুরের রুই মাছের খ্যাতির গল্প শুনতে পাবেন।

বাংলাদেশে এ রকম অসংখ্য জায়গার নাম আছে মাছের নামে। রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় আছে শৌলমারী, গঙ্গাচড়া উপজেলায় আছে পুঁটিমারী আর চান্দামারী নামের গ্রাম। এই নামগুলো এসেছে পুঁটিমাছ এবং চাঁদা মাছের নাম থেকে। সিরাজগঞ্জে কাপড় বিক্রির জন্য বিখ্যাত একটি হাটের নাম রুহিতপুর, এসেছে রুই মাছের নাম থেকে। এ ছাড়া ট্যাংরামারী ট্যাংরা মাছ থেকে, মাগুরা মাগুর মাছ থেকে, বোয়ালমারী বোয়াল মাছ থেকে, শিঙ্গিমারী শিং মাছ থেকে।

মাছে ভাতে যে বাঙালির জীবনযাপন, তার জায়গা বা স্থানের নামে মাছের নাম থাকবে না, তা কি হয়?

প্রথম আলোর সৌজন্যে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments